২০২৪ সালের ছাত্র গণ-অভ্যুত্থানকে রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে আলোচিত ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’-এর খসড়ায়। প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, নির্বাচিত সরকার নতুন যে সংবিধান প্রণয়ন করবে, তার ভূমিকায় এই ঐতিহাসিক অভ্যুত্থানের স্বীকৃতি থাকবে। পাশাপাশি, সংবিধানের তফসিলেও ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ সংযুক্ত থাকবে এবং ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট থেকে এটিকে কার্যকর ধরা হবে।
জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিকে সামনে রেখে অন্তর্বর্তী সরকার সম্প্রতি ঘোষণাপত্রের চূড়ান্ত খসড়া বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠিয়েছে। এসব দলের সম্মতি মিললে বর্ষপূর্তির দিনেই ঘোষণাপত্রটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হতে পারে।
খসড়ায় মোট ২৬টি দফা রয়েছে। প্রথম ২১টি দফায় বর্ণনা করা হয়েছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, অতীত গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও জুলাই অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট। বলা হয়েছে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক সংকট সমাধানে জনগণের এই অভ্যুত্থান সম্পূর্ণ যুক্তিসংগত, বৈধ ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত।
শেষ ৫টি দফায় রাষ্ট্রের কাঠামোগত সংস্কার, বিচারহীনতার অবসান, মানবাধিকার রক্ষা, দুর্নীতি ও বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করা হয়েছে। একইসঙ্গে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সংঘটিত গুম, খুন, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও রাষ্ট্রীয় সম্পদের লুণ্ঠনের দ্রুত বিচার করতে হবে।
ঘোষণাপত্রে অতীতের বাকশাল একদলীয় শাসনব্যবস্থারও সমালোচনা করা হয়েছে এবং উল্লেখ করা হয়েছে ৭ নভেম্বর ১৯৭৫ সালের সিপাহী-জনতার বিপ্লবের প্রসঙ্গ। পাশাপাশি ১৯৯০ সালের গণ-অভ্যুত্থান এবং ২০০৭-০৮ সালের এক-এগারোর অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থারও সমালোচনা এসেছে খসড়ায়।
বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার দেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে একটি ফ্যাসিস্ট, দুর্নীতিগ্রস্ত ও ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে বাংলাদেশকে। গুম, খুন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা হরণ, একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠার চেষ্টা এবং তিনটি প্রহসনের নির্বাচন (২০১৪, ২০১৮, ২০২৪) দেশের মানুষকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে।
বিশেষভাবে তুলে ধরা হয়েছে ছাত্রদের ৯ দফা আন্দোলনের কথা, যা পরবর্তীতে এক দফা দাবিতে রূপ নেয়। আন্দোলনের শেষ পর্যায়ে সামরিক বাহিনীর একটি অংশ জনগণের পক্ষে অবস্থান নেয়। জনতার গণভবনমুখী অভিযানের মুখে শেখ হাসিনা ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হন এবং দেশ ত্যাগ করেন।
এই ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে ২০২৪ সালের ছাত্র অভ্যুত্থানকে ইতিহাসের এক বৈপ্লবিক অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত করার পাশাপাশি আগামী রাষ্ট্রীয় কাঠামোর ভিত্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।