মঙ্গলবার ২৮ অক্টোবর, ২০২৫
সর্বশেষ:
নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ: অতিথি ৬০, সাংবাদিক ২৫  রাজধানীতে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল, অংশ নেওয়ায় গ্রেপ্তার ৮  এক আসনে একাধিক প্রার্থী প্রস্তুত রাখছে বিএনপি  ভোটকেন্দ্র বাড়লেও ভোটকক্ষ কমছে এবারের নির্বাচনে  জামায়াতের ৮০ শতাংশ প্রার্থীই নতুন মুখ  নারীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্নে জবাব দিলেন জামায়াতের আমির  তারেক রহমানের ফেরার নির্দিষ্ট তারিখ শিগগির জানা যাবে: সালাহউদ্দিন  আওয়ামী লীগ–জাতীয় পার্টির বাইরে সংসদ গঠনের আহ্বান নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারীর  বিতর্কিত কর্মকর্তাদের নির্বাচনে না রাখার দাবি বিএনপির  সময়মতো নির্বাচন না হলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হবে 

সরকারকে ‘তত্ত্বাবধায়ক’ ভূমিকায় দেখতে চায় বিএনপি 

অক্টোবর 22, 2025
সরকারকে ‘তত্ত্বাবধায়ক’ ভূমিকায় দেখতে চায় বিএনপি 

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাঁর নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারকে এখন থেকে নিরপেক্ষ ‘তত্ত্বাবধায়ক’ সরকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে বিএনপি। সে সঙ্গে সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে থাকা ‘দল-ঘনিষ্ঠদের’ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে বলেছে দলটি। 

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে তিন সদস্যের প্রতিনিধিদল গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ কথা জানায়। 

সরকার ও বিএনপির সূত্রগুলো জানিয়েছে, এই সাক্ষাতে ওই দুটি বিষয় ছাড়াও বিচার বিভাগ, সচিবালয় এবং প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে রদবদলসহ কয়েকটি বিষয়ে বিএনপির নেতারা প্রধান উপদেষ্টাকে পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ করেন। 

পরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে, বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস বিএনপির নেতাদের বলেছেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা হিসেবে নির্বাচনের আগে প্রশাসনের যাবতীয় রদবদল সরাসরি তাঁর তত্ত্বাবধানে হবে। জেলা প্রশাসক পদে যোগ্যতার ভিত্তিতেই নিয়োগ দেওয়া হবে। দায়িত্বে নিরপেক্ষ থেকে যেখানে যিনি শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে সক্ষম, সেই ব্যক্তিকেই তাঁরা বেছে নেবেন। 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বিচার বিভাগ ও সচিবালয়কে বিগত স্বৈরাচারী সরকারের দোসরমুক্ত করার জন্য প্রয়োজনে বিগত সরকারের সময়ে বঞ্চিত সম্প্রতি পদোন্নতি পাওয়া ১১৯ কর্মকর্তার মধ্য থেকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে বিএনপি। এ ছাড়া পুলিশের নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত রাখা, নতুন করে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা) পরিচালনা কমিটি গঠন বন্ধ রাখারও অনুরোধ জানিয়েছে দলটি। 

আমাদের দায়িত্ব নিরপেক্ষ থাকা। নির্বাচন একটি মহা আয়োজন। এখানে যিনি শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে সক্ষম, সেই ব্যক্তিকেই আমরা বেছে নেব। এটি আমার তত্ত্বাবধানে থাকবে। নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ করার জন্য যা কিছু প্রয়োজন, আমরা তা করব। 

পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুসারে, বর্তমানে পুলিশের মোট জনবলের প্রায় ৫০ শতাংশ নিয়োগ হয়েছে ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে। এসব নিয়োগের বড় অংশে রাজনৈতিক প্রভাব, দলীয় আনুগত্য এবং অবৈধ অর্থ লেনদেনের অভিযোগ ছিল। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার পুলিশের বিভিন্ন পদে নতুন সদস্য নিয়োগের উদ্যোগ নেয়। এই সরকারের আমলে কনস্টেবল পদে প্রায় সাত হাজার নিয়োগ হয়েছে। উপপরিদর্শক (এসআই) পদেও নিয়োগ হয়েছে। এ ছাড়া সরাসরি সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) পদে চার হাজার সদস্য নিয়োগ দিতে কার্যক্রম শুরু করেছে সরকার। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, এ সরকারের আমলে নিয়ম মেনে নিয়োগগুলো চূড়ান্ত করা হয়েছে। 

জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক রদবদল ও নিয়োগ নিয়ে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর পাল্টাপাল্টি অভিযোগের মধ্যে বিএনপি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করল। জামায়াতে ইসলামীও আজ বুধবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে। বিকেল পাঁচটায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এই সাক্ষাৎ হবে। জামায়াত জানিয়েছে, দলের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহেরের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদল যমুনায় যাবে। 

‘তত্ত্বাবধায়ক’ সরকারের ভূমিকায় যেতে হবে 

গতকাল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টা বৈঠক শেষে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম যমুনার সামনে উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। 

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা আজকে প্রধান উপদেষ্টা মহোদয়ের কাছে এসেছিলাম কতগুলো রাজনৈতিক কনসার্ন (উদ্বেগ) নিয়ে কথা বলার জন্য। বিশেষ করে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, সেই জাতীয় সংসদ অনুষ্ঠানকে অর্থবহ, নিরপেক্ষ, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্য এই মুহূর্ত থেকে যেটা প্রয়োজন, সেটা হচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে এখন কেয়ারটেকার গভর্নমেন্টের (তত্ত্বাবধায়ক সরকার) আদলে নিতে হবে।’ 

এর ব্যাখ্যা করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, প্রথমেই যে বিষয়টির প্রয়োজন হবে, তা হচ্ছে প্রশাসনকে জনগণের কাছে পুরোপুরিভাবে নিরপেক্ষ করে তৈরি করতে হবে। সচিবালয়ে যাঁরা এখনো আছেন, যাঁদের চিহ্নিত ফ্যাসিস্টদের দোসর বলা হয়, তাঁদের সরিয়ে সেখানে নিরপেক্ষ কর্মকর্তা দেওয়ার জন্য বিএনপি বলেছে। 

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা বলেছি যে জেলা প্রশাসন, বিশেষ করে সেখানেও একইভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আমরা কিছু কিছু কথা বলে এসেছি, যেগুলো আমরা মনে করি যে তারা এখনো সেই ফ্যাসিস্ট সরকারের স্বার্থ পূরণ করছে। সে জন্য তাদের অপসারণের কথা আমরা বলেছি। আমরা পুলিশের নিয়োগের ক্ষেত্রে, বিশেষ করে যেসব পদে নতুন করে নিয়োগ দেওয়া হবে বা যাদের পদোন্নতি দেওয়া হবে, সেই ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলে এসেছি।’ 

বিচার বিভাগে, বিশেষ করে উচ্চ আদালতে এখনো ফ্যাসিস্টের যেসব দোসর আছে, তাদের সরিয়ে নিরপেক্ষ বিচারক নিয়োগ দেওয়ার ব্যবস্থা করার কথা বলেছে বিএনপির প্রতিনিধিদল। 

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে নিরপেক্ষতা বজায় রাখার কথাও আমরা বলেছি। সরকারের মধ্যে যদি কোনো দলীয় লোক থেকে থাকেন, তাঁকে অপসারণ করার জন্য আমরা দাবি জানিয়ে এসেছি, এটাই ছিল প্রধান মূল কথা।’ 

কোনো উপদেষ্টার বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলেছেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম ‘না’–সূচক জবাব দেন। 

তবে বৈঠকে উপস্থিত একটি সূত্র জানিয়েছে, সরকারের একজন জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা এবং প্রধান উপদেষ্টার একজন বিশেষ সহকারীর একটি দলের প্রতি পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলে তাঁদের অপসারণ চেয়েছে বিএনপি। 

জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক রদবদল ও নিয়োগ নিয়ে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর পাল্টাপাল্টি অভিযোগ প্রকাশ্যে আসে গত সপ্তাহে। ১৩ অক্টোবর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টার বক্তব্য, কর্মকাণ্ড এবং সাম্প্রতিক প্রশাসনিক রদবদল নিয়ে দলের শীর্ষ নেতৃত্বে উদ্বেগ তৈরি করে। দলের স্থায়ী কমিটির সভায় বিষয়টি ছিল প্রধান আলোচ্য। 

বিএনপির নেতাদের অভিযোগ, গত বছরের ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর প্রশাসনে যেসব রদবদল ও নতুন পদায়ন হয়েছে, সেখানে জামায়াত–ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এমনকি মাঠপর্যায়ের ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের তালিকা তৈরিতেও ওই দলের প্রভাব দেখা যাচ্ছে। 

পরদিন ১৪ অক্টোবর এ বিষয়ে প্রকাশ্যে প্রতিক্রিয়া আসে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে। ওই দিন ঢাকায় দলীয় এক কর্মসূচিতে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, সরকারের কিছু উপদেষ্টা ‘একটি বিশেষ দলের পক্ষে কাজ করছেন’, তাঁদের নাম ও কণ্ঠের রেকর্ড জামায়াতের হাতে আছে। 

জামায়াতের এই নেতা আরও দাবি করেন, ‘সরকারের চার-পাঁচজন উপদেষ্টা একটি বিশেষ দলের পক্ষে সব নিয়োগ নিয়ন্ত্রণ করছেন। এতে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার কোনো লক্ষণ নেই।’ 

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp
Share on print

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

আরও পড়ুন