প্রথম আলোর সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু জুলাই সনদ স্বাক্ষর, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন, নির্বাচনে জোট গঠনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক বিষয়ে তার মতামত তুলে ধরেছেন। তিনি জুলাই সনদ বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ, নির্বাচনী শান্তি রক্ষা এবং দলীয় কৌশল নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেছেন।
জুলাই সনদ স্বাক্ষরিত হয়েছে, কিন্তু এর বাস্তবায়নের পদ্ধতি এখনো নির্ধারিত হয়নি। এ নিয়ে নতুন সংকটের আশঙ্কা আছে কি?
মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ঐকমত্য কমিশনে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হয়েছে। প্রতিটি দল তাদের মতামত প্রকাশ করেছে, কিন্তু ঐক্যমত্য হয়নি। বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির মধ্যে স্পষ্ট বিভক্তি দেখা গেছে। সরকার যদি জনগণের কাছে পরিস্থিতি স্পষ্ট করে একটি সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়, তাহলে নতুন করে কেউ সংকট তৈরি করার সাহস করবে না বলে মনে করি।
জুলাই সনদে এনসিপির স্বাক্ষর না করার বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?
তিনি বলেন, এনসিপির স্বাক্ষর না করায় বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তারা প্রক্রিয়ায় অংশ নিলেও অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। আশা করি, সনদের আইনি ভিত্তি ও বাস্তবায়নসংক্রান্ত বিষয় নিয়ে তাদের যে অসন্তোষ রয়েছে, সেটি মিটমাট হয়ে যাবে এবং শেষাবধি তারা স্বাক্ষর করবে।
অনেকে মনে করেন, জুলাই সনদে বিএনপির চাওয়াই প্রাধান্য পেয়েছে। আপনার মতামত কী?
মঞ্জু বলেন, কমিশনে বিএনপিকে বড় দল হিসেবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তাদের অভিজ্ঞতা এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী সংগ্রামের কারণে এমন পরিবেশ তৈরি হয়েছে যেন বিএনপি ক্ষমতাসীন দল।
জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান ঘিরে শুক্রবার সংসদ ভবন এলাকায় যে বিশৃঙ্খলা ঘটল, সরকার কি অন্যভাবে সামাল দিতে পারত?
তিনি বলেন, গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বড় ব্যর্থতা এখানে স্পষ্ট। ‘জুলাই যোদ্ধা’ ব্যানারে কোনো বড় প্রতিবাদ দেখা যায়নি, কিন্তু সনদ স্বাক্ষরের দিন হঠাৎ সংঘর্ষ ঘটল, যা সন্দেহজনক। এনসিপির বর্জনের সঙ্গে এর যোগসূত্র থাকতে পারে। সরকারের ম্যানেজমেন্ট মেকানিজম যে দুর্বল, এটা বিভিন্ন সময়ে বারবার স্পষ্ট হয়েছে এবং সেদিনও এর ব্যতিক্রম ছিল না।
ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে কোনো শঙ্কা দেখেন কি?
মঞ্জু বলেন, প্রশাসন ও পুলিশের দুর্বলতার কারণে নির্বাচন নিয়ে বড় শঙ্কা আছে। বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে বাগ্যুদ্ধ সংঘাতে রূপ নিলে পুলিশ নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখতে পারবে না বলে মনে হয়। প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা নিজেরাও সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে পারে। এ ছাড়া কার্যক্রম নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ নির্বাচনকে ঘিরে নানা কৌশলে অপতৎপরতা চালাবে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এখনকার অবস্থায় সুষ্ঠু নির্বাচন কতটা সম্ভব?
তিনি বলেন, পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নিলে সুষ্ঠু নির্বাচন কঠিন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি কেন্দ্রভিত্তিক তরুণদের স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে নিয়োজিত করার পরামর্শ দিয়েছি আমরা। নিরাপদ সড়ক আন্দোলন ও ফ্যাসিবাদের পলায়নের পর চুরি, ডাকাতি, লুণ্ঠন প্রতিরোধ ও সড়কের শৃঙ্খলা রক্ষায় স্বেচ্ছাসেবী তরুণদের ভূমিকা এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ছিল।
আসন্ন নির্বাচনে জোট বা সমঝোতার বিষয়ে আপনাদের দলের চিন্তা কী?
মঞ্জু বলেন, এবি পার্টি কোনো নির্বাচনী জোটে যাবে কি না, সে বিষয়ে এখনো দলীয় সিদ্ধান্ত হয়নি। আমরা এককভাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। যদি কোনো জোটে অংশ নেওয়ার প্রস্তাব আসে, তাহলে সেটি আমরা দলের ফোরামে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব। তবে পুরোনো রাজনৈতিক দলগুলোর চেয়ে যেসব দল নতুন বন্দোবস্তের রাজনৈতিক প্রস্তাব নিয়ে কাজ করছে, তাদের নিয়ে গঠিত জোট বা নির্বাচনী সমঝোতাকে আমরা প্রাধান্য দেব।